মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:১১ অপরাহ্ন
বিশেষ প্রতিবেদকঃ
কয়েক বছর ধরে বাজেটে ভর্তুকি খাতে সরকারের ব্যয় বাড়ছে। তবে এ ভর্তুকির খুব কম অংশই কৃষি বা অন্য উৎপাদনশীল খাতপাচ্ছে। বরং প্রতি বছর ভর্তুকির বড় অংশই চলে যাচ্ছে বিদ্যুৎখাতে। কারণ এ খাতে সরকারের লোকসান প্রতি বছর বেড়েই চলেছে।দুই অর্থবছর ধরে সরকারের মোট ভর্তুকির অর্ধেকেরও বেশি চলেযাচ্ছে বিদ্যুৎ খাতে।অন্য বছরগুলোয় এ খাতে ভর্তুকি ছিল মোট ভর্তুকির ৪০শতাংশের বেশি। অর্থ বিভাগের প্রকাশিত ‘মধ্যমেয়াদিসামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতি: ২০২৪-২৫ হতে ২০২৬-২৭’ শীর্ষক প্রকাশনায় এ তথ্য উঠে এসেছে। ২০২৪-২৫অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের সহায়ক প্রকাশনা হিসেবেএটি গত ৬ জুন প্রকাশ করা হয়েছে।এতে দেখা যায়, সাত বছরে বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি প্রায় ১০ গুণহয়েছে। যদিও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের শর্তের কারণে বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি থেকে বের হতে চাচ্ছেসরকার। এজন্য বছরে চারবার করে দাম বাড়ানোর পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে আগামী তিন বছরে বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি শূন্যে নামিয়ে আনা হবে।অর্থ বিভাগের তথ্যমতে, ২০১৭-১৮ অর্থবছর অর্থ বিভাগেরভর্তুকি ব্যয় ছিল আট হাজার ৫৭০ কোটি টাকা। এর মধ্যেবিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড তথা পিডিবিকে দেয়া হয়েছিল তিনহাজার ৫৫০ কোটি টাকা। অর্থাৎ মোট ভর্তুকির ৪১ দশমিক৪২ শতাংশ পেয়েছিল বিদ্যুৎ খাত। এছাড়া খাদ্যে এক হাজার ৪১৫কোটি টাকা এবং গ্যাস ও অন্যান্য খাতে তিন হাজার ৬০৫কোটি টাকা ভর্তুকি দেয়া হয়।পরের অর্থবছরই বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি বাবদ প্রায় দ্বিগুণ অর্থঢালতে হয় সরকারকে। ২০১৮-১৯ অর্থবছর সরকারের ভর্তুকি ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ১৩ হাজার ৫৫০ কোটি টাকা। এর মধ্যে বিদ্যুৎখাতেই দিতে হয় সাত হাজার ৯৬৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ সরকারের ভর্তুকি বরাদ্দের ৫৮ দশমিক ৭৯ শতাংশ পায় বিদ্যুৎ খাত।ওই অর্থবছর খাদ্যে সরকারের ভর্তুকি ব্যয় ছিল তিন হাজার ৭৪কোটি টাকা এবং গ্যাস ও অন্যান্য খাতে দুই হাজার ৫১৪কোটি টাকা।
২০১৯-২০ অর্থবছর সরকারের ভর্তুকি ব্যয় বাড়লেও বিদ্যুৎ খাতেতা সামান্য হ্রাস পায়। ওই অর্থবছর সরকারের মোট ভর্তুকিব্যয় ছিল ১৫ হাজার ১২০ কোটি টাকা। এর মধ্যে সাত হাজার ৪৩৯ কোটি টাকা বা ৪৯ দশমিক ২০ শতাংশ পায় বিদ্যুৎ খাত।আর খাদ্যে চার হাজার ১৭০ কোটি এবং গ্যাস ও অন্যান্য খাতেদেয়া হয় তিন হাজার ৫১৬ কোটি টাকা।পরের দুই অর্থবছর সরকারের ভর্তুকি ব্যয় অনেকটাই বৃদ্ধি পায়। তবে সে অনুপাতে বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি লাগেনি। ফলে বিদ্যুৎখাতে আনুপাতিক হারে ভর্তুকি হ্রাস পেয়েছে। এর মধ্যে ২০২০২১ অর্থবছরে সরকারের ভর্তুকি ব্যয় ছিল ১৯ হাজার ২৩০কোটি টাকা, যার ৪৬ দশমিক ৫২ শতাংশ বা আট হাজার ৯৪৫কোটি টাকা বিদ্যুৎ খাতে ব্যয় করা হয়। আর খাদ্যে ভর্তুকিদেয়া হয় চার হাজার ৯৮৭ কোটি টাকা এবং গ্যাস ও অন্যান্যখাতে পাঁচ হাজার ২৯৭ কোটি টাকা।পরের অর্থবছর সরকারের ভর্তুকি ব্যয় আরও বেড়ে দাঁড়ায় ২৭হাজার ৫৩০ কোটি টাকা। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে দেয়া হয়েছিল১১ হাজার ৯৬০ কোটি টাকা বা ৪৩ দশমিক ৪৪ শতাংশ। ওইঅর্থবছর খাদ্যে ভর্তুকি বাবদ বরাদ্দ ছিল ছয় হাজার ৩৪৫ কোটিটাকা এবং গ্যাস ও অন্যান্য খাতে ৯ হাজার ২২৬ কোটি টাকা।যদিও পরের অর্থবছর বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি রেকর্ড পরিমাণবৃদ্ধি পায়।
২০২২-২৩ অর্থবছর সরকারের ভর্তুকি ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৪৪হাজার ৭২৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি দেয়াহয় ২৯ হাজার ৫১১ কোটি টাকা বা প্রায় ৬৬ শতাংশ। ওইঅর্থবছর বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি ব্যয় এক লাফে প্রায় আড়াইগুণ হয়ে যায়। আর খাদ্যে ২০২২-২৩ অর্থবছর ভর্তুকি দেয়া হয়েছিল ছয় হাজার ৪১৬ কোটি টাকা এবং গ্যাস ও অন্যান্য খাতে আটহাজার ৭৯৬ কোটি টাকা।এদিকে শেষ হতে যাওয়া অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট অনুযায়ী,২০২৩-২৪ অর্থবছর সরকারের ভর্তুকি ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬০ হাজার ৬৬৭ কোটি টাকা, যার মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে দেয়া হয়েছে ৩৫ হাজার কোটি টাকা বা ৫৭ দশমিক ৬৯ শতাংশ। এ হিসাবে বিদ্যুৎ খাতে সরকারের ভর্তুকি ব্যয় গত সাত বছরে বেড়ে প্রায়৯ দশমিক ৮৬ গুণ হয়েছে। এছাড়া গত অর্থবছর খাদ্যে ভর্তুকিদেয়া হয়েছে সাত হাজার ৬২০ কোটি টাকা এবং গ্যাস ওঅন্যান্য খাতে গেছে ১৮ হাজার ৩৪৭ কোটি টাকা
ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: BD IT SEBA